বিড়ি ও সিগারেট খাওয়া হালাল না হারাম?
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন। আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো বিড়ি ও সিগারেট খাওয়া হালাল না হারাম?
প্রথমে আসি, যারা সিগারেট খায় তারা নিজেরাও জানে যে সিগারেট খাওয়া কতটা ক্ষতিকর নিজের স্বাস্থ্যের জন্য। কিন্তু এরপরেও তারা এর আসক্তি ছাড়তে পারে না। এজন্যই ইসলাম সিগারেট খাওয়ার পক্ষে কথা বলে না। ইসলাম সবসময়ই মানুষের কল্যাণের পক্ষে বিধান দিয়ে থাকে সিগারেটের বিষয়টা এমনই।
রাসুল সা. বলেন, প্রতিটি মাতাল করে দেয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম।
অনেকে প্রশ্ন করে বিড়ি ও সিগারেট খাওয়া নিয়ে ইসলামে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার দলিল কি?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধানের সবকিছুর স্পষ্ট দলিল নেই। আর দলিল না থাকলেই যে কোনো জিনিস হালাল, তা নয়। শরিয়তের বিধিবিধান থেকে ফকিহগণ এমন কিছু নীতিমালা নির্ণয় করেন, যার মাধ্যমে বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম।
নেশা জাতীয় দ্রব্য মানুষকে নেশাগ্রস্থ করে থাকে। যেমন মদ খাওয়া হারাম । এটা হারাম হওয়ার পেছনের কারণ হচ্ছে এটি ব্যক্তিকে মাতাল করে তোলে। কিন্তু বিড়ি বা সিগারেট যেহেতু ব্যক্তিকে মাতাল করে তুলে না সেহেতু এটি খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম বলা যায় না। সিগারেট খাওয়া হচ্ছে মাকরুহ। এটি থেকে অত্যাধিক পরিমাণ দুর্গন্ধ আসে এবং এটি ক্ষতির কারণ হওয়ার কারণে এটি হারামের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সিগারেট খাওয়া একটি নেশার মত হয়ে যায় সিগারেট না খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে এটি খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম বলে বিবেচিত হবে।
এ ব্যাপারে নিচে একটি হাদিস উল্লেখ করা হলো ঃ
بَاب كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিসই (মাতাল করে দেয়া বস্তুই) মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। (মুসলিম ২০০৩, ইবনে মাজাহ ৩৩৯০, মুসনাদে আহমাদ ৪৮৩০)
চলুন এবার পবিত্র কুরআনে দেখি কি বলা হয়েছে ঃ
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা: মায়িদা ৯০)
চলুন এবার আমরা জানি ধূমপান করা কি নাজায়েজ নাকি জায়েজ?
ধূমপান করা নাজায়েজ তার পেছনের কারণগুলো হলো এতে অর্থের অপচয় হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করা বড় ধরনের গুনাহ। তাই ধুমপান করা নাজায়েজ। বেশি বেশি ধুমপায়ীর মুখে অনেক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় যাতে অন্যদেরও কষ্ট পোহাতে হয়। যা আরও একটি আলাদা গুনাহ। এসব কারণে ধূমপান করা নাজায়েজ। আমাদের সকলেরই উচিত ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
আর আমরা সকলে জানি দুর্গন্ধযুক্ত থাকা অবস্থায় নামাজে দাঁড়ানো যায় না। কেননা দুর্গন্ধ যুক্ত অবস্থায় নামাজে দাঁড়ানো মাকরূহে তাহরীমি।
এই অবস্থায় মসজিদেও প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেননা এ অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করাও মাকরুহ। হাদিসে কাঁচা পেঁয়াজ রসুন খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যেটি ধূমপানের চেয়েও কম দুর্গন্ধযুক্ত। সুতরাং ধূমপান করা কোনভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে সিগারেট খেলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় কি না?
সিগারেট খেলে ৪০ দিন নামাজ কবুল হয় না এ ব্যাপারে যেটি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সে ব্যাপারে কোরআন হাদিসের কোথাও কোন কথা বলা নেই।
যেটি বলা আছে সেটি হচ্ছে মদ্যপায়ীর ক্ষেত্রে। হাদিসে বলা হয়েছে, যে মদ পান করবে তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হবে না।
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ أَنْبَأَنَا عُثْمَانُ بْنُ حِصْنِ بْنِ عَلَّاقٍ دِمَشْقِيٌّ قَالَ حَدَّثَنَا عُرْوَةُ بْنُ رُوَيْمٍ أَنَّ ابْنَ الدَّيْلَمِيِّ رَكِبَ يَطْلُبُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ ابْنُ الدَّيْلَمِيِّ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَقُلْتُ هَلْ سَمِعْتَ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ شَأْنَ الْخَمْرِ بِشَيْءٍ فَقَالَ نَعَمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ رَجُلٌ مِنْ أُمَّتِي فَيَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ صَلَاةً أَرْبَعِينَ يَوْمًا
আলী ইবন হুজুর (রহঃ) ... উরওয়া ইবন রুওয়ায়ম (রহঃ) বলেন, একদা ইবন দায়লামী (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ)-এর খোঁজে সওয়ার হলেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবদুল্লাহ্ ইবন আমর! আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মদ সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তা’আলা তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করবেন না। (সুনান আন-নাসায়ী ৫৬৬৪) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১. সিগারেট খাওয়ার মাধ্যমে অর্থ অপচয় করা হয়। ইসলামে অর্থ অপচয় বা যেকোনো ধরনের অপচয় সম্পূর্ণরূপে হারাম।
২. ইসলামে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্যাদি খাওয়া বা সেবন হারাম। সিগারেটে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিক।
৩. বেশি পরিমাণ সিগারেট পান করলে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।
৪. নেশা জাতীয় দ্রব্য মাদকদ্রব্য যেগুলোর মাধ্যমে জ্ঞান শূন্যতা আসে সেগুলো ইসলামের সম্পূর্ণ রুপে হারাম। সিগারেট অত্যাধিক খাওয়ার ফলে জ্ঞান শূন্যতা বা নেশা আসতে পারে।
৬. সিগারেট খাওয়ার মাধ্যমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় আর যারা সিগারেট খায় না তারা সেই দুর্গন্ধে কষ্ট পায়। সুতরাং এটি হচ্ছে অপবিত্র জিনিস। আর ইসলাম অপবিত্র জিনিস খাওয়া কে করেছে হারাম এবং পবিত্র জিনিস খাওয়াকে কে করেছে হালাল।
সিগারেট খাওয়া বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিকর হতে পারে, যেমন:
১. রোগের ঝুঁকি: সিগারেটে থাকা নিকোটিন, ক্যাডমিয়াম, বিশুদ্ধ কার্বন মনোবিকার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যেমন কর্কট রোগ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
২. শ্বাসকষ্ট: ধূমপানের কারণে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৩। রোগের সঙ্গে সম্পর্ক: ধূমপানের ফলে রোগের মৌলিকভাবে কারণ হতে পারে এবং রোগের প্রবর্তন বাড়ায়।
৪. শিশুদের জন্য হানির ঝুঁকি: গর্ভকালীন ধূমপানের ফলে শিশুর জন্য হানির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য: ধূমপান মানসিক স্বাস্থ্যের সাথও সম্পর্কিত হতে পারে, যেমন অসুস্থ মানসিক অবস্থা, উদাসীনতা, ইত্যাদি।
এছাড়াও, সিগারেট ধূমপান করার কারণে সামাজিক ও আরোগ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা উৎপাদন হতে পারে।
সুতরাং বলা যেতে পারে ধর্মীয় দিক থেকে এবং সামাজিক ও আরোগ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সিগারেট খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। তাই আমাদের সকলের উচিত সিগারেট না খাওয়া।
সর্বশেষ কথা আপনার যদি আমার আর্টিকেল টা ভাল লাগে তাহলে আবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার কি সম্মন্ধে আরো জানার আছে তা নিয়ে মন্তব্য প্রকাশ করবেন।