কোকাকোলার সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক কি? কোকাকোলা কি ইসরাইলের পণ্য?

কোকা-কোলা এবং জায়নবাদের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত এবং জটিল। অভিযোগ রয়েছে যে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই পানীয় কোম্পানিটি ইসরায়েলি সরকার এবং জায়নবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করে, যা ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদারিত্ব ও বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করে।

কোকা-কোলা এবং জায়নবাদের মধ্যে জটিল সম্পর্ক: বিস্তারিত বিশ্লেষণ



অভিযোগের ভিত্তি:

  • অর্থায়ন:
    • ২০১৫ সালে, কোকা-কোলার ইসরায়েলি বোটলিং অংশীদার, সেন্ট্রাল বোটলিং কোম্পানি (CBC), ইম তিরতজু নামক একটি জায়নবাদী সংগঠনকে ৫০,০০০ শেকেল (প্রায় ১৪,০০০ মার্কিন ডলার) দান করেছিল। এই সংগঠনটি নাকবাকে অস্বীকার করে, যা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ও জমি হারানোর ঘটনা।
    • CBC ইসরায়েলি সরকারের বসতি স্থাপনের নীতিকেও সমর্থন করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়।
  • বসতি স্থাপন:
    • কোকা-কোলার একটি কারখানা পশ্চিম তীরে একটি বসতিতে অবস্থিত, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয়।
    • এই বসতিগুলি ফিলিস্তিনি জমির উপর নির্মিত এবং প্রায়শই সহিংসতা ও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
  • বর্জন:
    • এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে, কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন কোকা-কোলার বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দিয়েছে।
    • ২০১৯ সালে, তুর্কি সংসদ কোকা-কোলা এবং পেপসিকোর পণ্যগুলিকে সংসদ ভবনে নিষিদ্ধ করে।

কোকা-কোলার প্রতিক্রিয়া:

  • কোকা-কোলা দাবি করে যে তারা কোন রাজনৈতিক দল বা আন্দোলনকে সমর্থন করে না।
  • তারা বলেছে যে তারা CBC-এর দান সম্পর্কে অবগত ছিল না এবং এটি অনুমোদন করেনি।
  • তারা পশ্চিম তীরের কারখানা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
  • যাইহোক, কোকা-কোলা এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি এবং কারখানাটি এখনও চালু আছে।

অন্যান্য বিষয়:

  • কোকা-কোলা ইসরায়েলি সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে।
  • কোম্পানিটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সৈন্যদের ছাড় দেয়।
  • কোকা-কোলা ইসরায়েলি পণ্যগুলিকে বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করে।

আরও উদাহরণ:

  • ২০১৪ সালে: গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার সময়, কোকা-কোলা তাদের ইসরায়েলি বোটলিং অংশীদারকে ফিলিস্তিনি এলাকায় পানীয় সরবরাহ করে।
  • ২০১৮ সালে: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা চালায়। এই সময়, কোকা-কোলা তাদের ইসরায়েলি বোটলিং অংশীদারকে ফিলিস্তিনি এলাকায় পানীয় সরবরাহ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়নি। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের পানি সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।
  • ২০২০ সালে: কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, কোকা-কোলা ইসরায়েলি সরকারকে ৫ মিলিয়ন শেকেল (প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দান করে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কোন অর্থ সাহায্য দেয়নি।
  • ২০২১ সালে: ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় আবারো হামলা চালায়। এই সময়, কোকা-কোলা তাদের ইসরায়েলি বোটলিং অংশীদারকে ফিলিস্তিনি এলাকায় পানীয় সরবরাহ বন্ধ করার জন্য আবারও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
  • উপসংহার:

    কোকা-কোলা এবং জায়নবাদের মধ্যে সম্পর্ক জটিল এবং বিতর্কিত। কোম্পানিটি ইসরায়েলি সরকার এবং জায়নবাদী আন্দোলনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে, যা ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদারিত্ব ও বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করে। এই কারণে, অনেকেই কোকা-কোলার বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দিয়েছেন।

    এই বিতর্কের দুটি দিকই বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কোকা-কোলার উপর যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তার যাচাই করা এবং কোম্পানির কার্যক্রমের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে নিজের মতামত গঠন করা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব।

    দ্রষ্টব্য:


কোকা-কোলা এবং ইসরায়েল: একটি জটিল সম্পর্ক (বিস্তারিত আলোচনা)


পূর্ববর্তী প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করা বিষয়গুলি ছাড়াও, কোকা-কোলা এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের আরও কিছু জটিল দিক নীচে আলোচনা করা হল:


ইতিহাস:

  • কোকা-কোলা ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলে ব্যবসা শুরু করে।
  • ১৯৬০-এর দশকে, কোম্পানিটি ওয়েস্ট ব্যাংকে কার্যক্রম শুরু করে, যা তখন জর্ডানের দখলে ছিল।
  • ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল ওয়েস্ট ব্যাংক দখল করে নেয় এবং কোকা-কোলা সেখানে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যায়।

মানবাধিকার:

  • ফিলিস্তিনি মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি অভিযোগ করেছে যে কোকা-কোলা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে।
  • এর মধ্যে রয়েছে ওয়েস্ট ব্যাংকে বসতি স্থাপনের জন্য জমি দখল এবং ফিলিস্তিনিদের জলের অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করা।
  • কোকা-কোলা এই অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছে।

বিকল্প:

  • কিছু ভোক্তা কোকা-কোলার পরিবর্তে নৈতিকভাবে উৎপাদিত বিকল্প পানীয় বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
  • এই বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি-নির্মিত সোডা এবং ন্যায্য বাণিজ্য-প্রमाणিত পানীয়।

সাম্প্রতিক ঘটনা:

  • ২০২১ সালে, কোকা-কোলা ঘোষণা করে যে তারা ইসরায়েলে তার ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি নতুন কোম্পানি গঠন করবে।
  • এই পদক্ষেপটিকে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের সাথে কোকা-কোলার জড়িত থাকার প্রতিবাদে বয়কটকারীদের একটি বিজয় হিসাবে দেখা হয়েছিল।
  • যাইহোক, কিছু সমালোচক যুক্তি দিয়েছেন যে এটি একটি প্রতারণামূলক পদক্ষেপ যা কোকা-কোলাকে তার দায়িত্ব এড়াতে দেয়।

উপসংহার:

কোকা-কোলা এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক জটিল এবং বিতর্কিত। অভিযোগ রয়েছে যে কোম্পানিটি ইসরায়েলি সরকার এবং জায়নবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করে, যা ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদারিত্ব ও বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করে। কোকা-কোলা এই অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছে, তবে বিতর্কটি এখনও চলছে।

মনে রাখবেন:

এই বিষয়টি জটিল এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। উপস্থাপিত তথ্যগুলি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ বা নিরপেক্ষ নাও হতে পারে।

আপনার নিজস্ব মতামত গঠনের জন্য আপনার নিজের গবেষণা করা এবং বিভিন্ন উৎস বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।


পরবর্তী পোষ্ট পূর্ববর্তী পোষ্ট