কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম, বিবাহের হলফনামা নমুনা Court Marriage Stamp Paper

এই পোষ্টের মাধ্যমে জানব কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম ও বিবাহের হলফনামা নমুনা সম্পর্কে। কিভাবে বিয়ের হলফনামাটি লিখে ও কত টাকা লাগে জানতে পারবেন।

ভূমিকা:

বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধন আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৫৪ এর মাধ্যমে আইনিভাবে কোর্ট ম্যারেজ সম্পন্ন করা যায়। এই পদ্ধতিতে, ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতি আইনিভাবে বিবাহিত হতে পারেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  1. আবেদনপত্র: নির্ধারিত ফর্মে পূরণকৃত ও স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র।
  2. জন্ম সনদপত্র: বর ও কনের জন্ম সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
  3. জাতীয় পরিচয়পত্র: বর ও কনের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
  4. পাসপোর্ট (ঐচ্ছিক): বর ও কনের পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে)।
  5. ছবি: বর ও কনের পাসপোর্ট আকারের দুটি সত্যায়িত ছবি।
  6. বিবাহের সম্মতিপত্র: বর ও কনের স্বাক্ষরিত ও নোটারি পাবলিক কর্তৃক যাচাই করা বিবাহের সম্মতিপত্র।
  7. গার্জিয়ানের সম্মতি (প্রয়োজনে): যদি বর বা কন 18 বছরের কম বয়সী হয়, তাহলে তাদের গার্জিয়ানের স্বাক্ষরিত ও নোটারি পাবলিক কর্তৃক যাচাই করা সম্মতিপত্র।
  8. ধর্মীয় পরিচয়পত্র (ঐচ্ছিক): বর ও কনের ধর্মীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে)।
  9. বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি (প্রযোজ্য হলে): পূর্ববর্তী বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, আদালতের রায়ের সত্যায়িত ফটোকপি।

প্রক্রিয়া:

  1. আবেদন: উপরে তালিকাভুক্ত সমস্ত কাগজপত্র সহ স্থানীয় জেলা আদালতের পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।
  2. তারিখ নির্ধারণ: আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করার পর আদালত বিবাহ সম্পন্ন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করবে।
  3. উপস্থিতি: নির্ধারিত তারিখে, বর ও কন, দু'জন সাক্ষী এবং তাদের গার্জিয়ান (প্রয়োজনে) আদালতে উপস্থিত থাকবেন।
  4. হলফনামা পাঠ ও প্রশ্ন: আদালত বিবাহের হলফনামা পড়ে শুনিয়ে বর ও কনকে প্রশ্ন করবে।
  5. সম্মতি ও নিবন্ধন: উভয় পক্ষ সম্মতি জানালে, আদালত বিবাহ নিবন্ধন করবে এবং একটি বিবাহ সনদপত্র প্রদান করবে।

বিবাহের হলফনামা:

বিবাহের হলফনামা আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ফর্মে লেখা হয়। তবে, সাধারণত এতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থাকে:

বিবাহের হলফনামা (স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৫৪ অনুযায়ী)

আদালত: [আদালতের নাম]

বিষয়: বিবাহ নিবন্ধন

আবেদনকারী:

  • নাম: [বরের নাম]

  • ঠিকানা: [বরের ঠিকানা]

  • পেশা: [বরের পেশা]

  • নাম: [কনের নাম]

  • ঠিকানা: [কনের ঠিকানা]

  • পেশা: [কনের পেশা]

সাক্ষী:

  • নাম: [প্রথম সাক্ষীর নাম]

  • ঠিকানা: [প্রথম সাক্ষীর ঠিকানা]

  • পেশা: [প্রথম সাক্ষীর পেশা]

  • নাম: [দ্বিতীয় সাক্ষীর নাম]

  • ঠিকানা: [দ্বিতীয় সাক্ষীর ঠিকানা]

  • পেশা: [দ্বিতীয় সাক্ষীর পেশা]

হলফনামা:

আমি, [বরের নাম], শপথ করে ঘোষণা করছি যে,

  • আমি স্বেচ্ছায় এবং আমার পূর্ণ সম্মতিতে [কনের নাম]-কে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করছি।
  • [কনের নাম]-কে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমার কোনো বাধ্যতা বা চাপ নেই।
  • আমি [কনের নাম]-কে ভালোবাসব, সম্মান করব এবং তার যত্ন নেব।
  • আমি [কনের নাম]-এর সাথে সুখে-দুঃখে, সুস্থতায়-অসুস্থতায়, ধন-সম্পদে-অভাবী অবস্থায় সর্বদা পাশে থাকব।
  • আমি [কনের নাম]-এর প্রতি বিশ্বস্ত থাকব এবং অন্য কোনো নারীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হব না।

আমি, [কনের নাম], শপথ করে ঘোষণা করছি যে,

  • আমি স্বেচ্ছায় এবং আমার পূর্ণ সম্মতিতে [বরের নাম]-কে আমার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করছি।
  • [বরের নাম]-কে আমার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমার কোনো বাধ্যতা বা চাপ নেই।
  • আমি [বরের নাম]-কে ভালোবাসব, সম্মান করব এবং তার যত্ন নেব।
  • আমি [বরের নাম]-এর সাথে সুখে-দুঃখে, সুস্থতায়-অসুস্থতায়, ধন-সম্পদে-অভাবী অবস্থায় সর্বদা পাশে থাকব।
  • আমি [বরের নাম]-এর প্রতি বিশ্বস্ত থাকব এবং অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হব না।

স্বাক্ষর:

  • বর: _____________________
  • কন: _____________________
  • প্রথম সাক্ষী: _____________________
  • দ্বিতীয় সাক্ষী: _____________________

তারিখ: [তারিখ]

দ্রষ্টব্য:

  • উপরে উল্লিখিত হলফনামাটি একটি নমুনা। নির্দিষ্ট আদালতের নিয়ম অনুযায়ী হলফনামার ভাষা ও বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন থাকতে পারে।
  • বিবাহ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময় আদালত কর্তৃক প্রদত্ত নির্ধারিত হলফনামা ফর্ম ব্যবহার করা উচিত

বাংলাদেশে কোর্ট ম্যারেজ: বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকা:

বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধন আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী, ধর্মীয় আইনের পাশাপাশি আইনিভাবে নিবন্ধিত হওয়াও বাধ্যতামূলক। কোর্ট ম্যারেজ হল এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া যেখানে একজন দম্পতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কর্মকর্তার সামনে হলফনামা করে বিবাহিত হয় এবং তাদের বিবাহ আইনিভাবে নিবন্ধিত হয়।

কোর্ট ম্যারেজের যোগ্যতা:

  • বয়স: পুরুষের জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং মহিলার জন্য ১৮ বছর।
  • স্বেচ্ছাসম্মতি: উভয় পক্ষকেই বিবাহের জন্য স্বেচ্ছাসম্মত হতে হবে।
  • মানসিক সুস্থতা: উভয় পক্ষকেই মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
  • বিবাহের পূর্ববর্তী অবস্থা: একজন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে বিবাহিত হতে পারবেন না।
  • ধর্মীয় বিবাহ: আন্তঃধর্মীয় বিবাহের ক্ষেত্রে, ধর্মীয় আইন অনুযায়ীও বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে।

কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়া:

  1. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ:
    • জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট (বর ও কনের)
    • জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড (বর ও কনের)
    • দুই সাক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড
    • পাসপোর্ট সাইজের দুটি ছবি (বর ও কনের)
    • বিবাহের হলফনামা (উকিলের মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে)
  2. নির্ধারিত ফি প্রদান:
    • আবেদন ফি: ৫০ টাকা
    • স্ট্যাম্প ফি: ২০০ টাকা
    • রেজিস্ট্রেশন ফি: ৫০০ টাকা
  3. স্থানীয় জেলা প্রশাসন (ডিसी) অফিসে যাওয়া:
    • সকল কাগজপত্র সহ নির্ধারিত ডিসি অফিসে যান।
  4. হলফনামা স্বাক্ষর:
    • ডিসি অফিসের নির্ধারিত কর্মকর্তার সামনে হলফনামা স্বাক্ষর করুন।
  5. বিবাহ নিবন্ধন সনদ গ্রহণ:
    • স্বাক্ষরিত হলফনামা জমা দেওয়ার পর, বিবাহ নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করুন।

কোর্ট ম্যারেজের সুবিধা:

  • সামাজিক সুবিধা:

    • ধর্মনিরপেক্ষতা: কোর্ট ম্যারেজ ধর্মনিরপেক্ষ বিবাহ পদ্ধতি যা সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত।
    • সামাজিক সমতা: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকার, উত্তরাধিকারের অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।
    • দहेज প্রথা দূরীকরণ: কোর্ট ম্যারেজ দहेज প্রথা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    • নারীর ক্ষমতায়ন: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
    • সামাজিক স্থিতিশীলতা: কোর্ট ম্যারেজ সামাজিক স্থিতিশীলতা ও পরিবারিক সুখ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

    আইনি সুবিধা:

    • আইনি বৈধতা: কোর্ট ম্যারেজ আইনিভাবে বৈধ বিবাহ এবং ভবিষ্যতে কোন বিরোধের ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা প্রদান করে।
    • মালিকানা ও উত্তরাধিকারের অধিকার: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকার, উত্তরাধিকারের অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।
    • طلاقের সহজ প্রক্রিয়া: কোর্ট ম্যারেজের ক্ষেত্রে তালাকের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ ও দ্রুত।
    • শিশুর অধিকার: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা আইনিভাবে স্বীকৃত হয় এবং তাদের সকল অধিকার পায়।
    • আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: কোর্ট ম্যারেজ সনদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, যা বিদেশ ভ্রমণ ও বসবাসের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে।

    অন্যান্য সুবিধা:

    • খরচ কম: অন্যান্য বিবাহের পদ্ধতির তুলনায় কোর্ট ম্যারেজের খরচ অনেক কম।
    • সময় সাশ্রয়ী: কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত ও সহজ, যা সময় সাশ্রয় করে।
    • ঝামেলামুক্ত: কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়া ঝামেলামুক্ত ও সহজবোধ্য।
    • পরিবেশবান্ধব: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় খরচ ও অপচয় রোধ করা সম্ভব।

    উপসংহার:

    কোর্ট ম্যারেজ সামাজিক, আইনি ও ব্যক্তিগত দিক থেকে বহুমুখী সুবিধা প্রদান করে। এটি একটি সহজ, দ্রুত, খরচ কম এবং ঝামেলামুক্ত বিবাহ পদ্ধতি যা সকলের জন্য উপযোগী।

    দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত সুবিধাগুলি ছাড়াও কোর্ট ম্যারেজ আরও অনেক সুবিধা প্রদান করে।



পরবর্তী পোষ্ট পূর্ববর্তী পোষ্ট